ফিলিস্তিনের ছিটমহল গাজায় শনিবার ইসরায়েলি ড্রোন ও বিমান হামলায় অন্তত ২০ জন নিহত এবং ৮০-এর বেশি আহত হয়েছেন, জানিয়েছে স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ। এই ঘটনায় গাজায় হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি আবারও ঝুঁকির মুখে পড়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও চিকিৎসা কর্মীরা জানিয়েছেন, প্রথম হামলাটি গাজা সিটির ঘনবসতিপূর্ণ রিমাল এলাকায় একটি গাড়ির উপর চালানো হয়। ড্রোন হামলায় গাড়িটিতে আগুন ধরে যায় এবং হতাহতদের উদ্ধার করতে বহু মানুষ ঘটনাস্থলে জড়ো হন। রয়টার্স জানিয়েছে, গাড়িতে থাকা বা পথচারীদের মধ্যে যারা মারা গেছেন, তা তাৎক্ষণিকভাবে নির্দিষ্ট করা যায়নি।
এরপর ইসরায়েলি বিমান বাহিনী গাজার মধ্যাঞ্চলীয় দিয়ের আল-বালাহ ও নুসেইরাত শিবিরে দুটি বাড়িতে পৃথক বিমান হামলা চালায়। এতে অন্তত ১০ জন নিহত ও কয়েকজন আহত হন। পরে গাজা সিটির পশ্চিমাংশে আরেকটি বাড়িতে ড্রোন থেকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়, যাতে আরও অন্তত পাঁচজন নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হন। এর ফলে শনিবার গাজায় মোট হতাহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা কমপক্ষে ২০ জনে পৌঁছেছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, গাজায় একজন ফিলিস্তিনি বন্দুকধারী তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় ঢুকে পড়ে এবং সেই সড়ক ব্যবহারের অপব্যবহার করে, যেটি মানবিক সহায়তা গাজার দক্ষিণাঞ্চলে পৌঁছানোর জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে।
তারা অভিযোগ করেছে যে ‘যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্পষ্টভাবে লঙ্ঘন করা হয়েছে’। এর জবাবে, ইসরায়েলি সেনারা দাবি করেছে যে তারা গাজার বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে।
গাজায় হামাসের একজন কর্মকর্তা ইসরায়েলের এসব অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি বলেছেন, “ইসরায়েল এই অজুহাতগুলো ব্যবহার করছে ফিলিস্তিনিদের হত্যা করার জন্য।” তিনি আরও জানিয়েছেন যে হামাস যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ১০ অক্টোবর থেকে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি দুই বছর ধরে চলা গাজা যুদ্ধে সাময়িক শান্তি এনলেও সহিংসতা পুরোপুরি থামেনি। এই সহিংসতার জন্য ইসরায়েল ও হামাস নিয়মিতভাবে একে অপরকে দায়ী করছে।
যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ামাত্রই লাখ লাখ ফিলিস্তিনি গাজায় তাদের ধ্বংসপ্রাপ্ত বাড়িঘরে ফিরে যেতে শুরু করে। ইসরায়েল তাদের শহরাঞ্চল থেকে সেনাদের সরিয়ে নিলে, অবরুদ্ধ ছিটমহলটিতে ত্রাণ সরবরাহও বৃদ্ধি পেতে শুরু করে।
যদিও ইসরায়েলি সেনারা গাজা ছাড়েনি, যুদ্ধের ব্যাপক ক্ষতির মুখে থাকা হামাস পুনরায় নিজেদের পুনর্গঠন ও শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে। এতে গাজার পরিস্থিতি ক্রমশ ভয়াবহ রূপ নিতে শুরু করেছে। অঞ্চলটির এই বিভাজিত অবস্থা নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উদ্বিগ্ন।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর দেড় মাসেরও কম সময়ের মধ্যে ইসরায়েলি হামলায় ৩১৬ জন নিহত হয়েছেন। ইসরায়েল জানিয়েছে, এ সময় গাজার পক্ষ থেকে তাদের তিনজন সেনা নিহত হয়েছে এবং তারা হামাস ও তাদের মিত্র সশস্ত্র ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের ওপর আক্রমণ চালাচ্ছে।
আন্তর্জাতিক ডেস্ক 










